পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে লালমনিরহাটে চার সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকাস্থ লালমনিরহাট সাংবাদিক ফোরাম (এলজেএফডি) ও লালমনিরহাটে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব পৃথক পৃথকভাবে মানববন্ধন করেছে । মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন,ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাইরুল আলম, বিইউএফজের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন,‘সারাদেশে সাংবাদিকদের উপর হামলা এখন নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে। লালমনিরহাটে বিনা উস্কানিতে সাংবাদিকদের উপর যে হামলা হয়েছে আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অতিদ্রুত অভিযুক্ত সকলকে গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করছি।’ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম বলেন,‘সাংবাদিকদের হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো না,অতিদ্রুত সাংবাদিকদের উপর হামলারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলবে।’ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন,‘বারবার সাংবাদিকদের উপর হামলা হচ্ছে কিন্তু কোনোটারো যথোপযুক্ত শাস্তি হচ্ছে না। আমরা সরকারকে অনুরোধ করছি দ্রুত সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আইন প্রনয়ণ করুন নাহলে কিন্তু সাংবাদিক সমাজ ঘরে বসে থাকবে না’। ঢাকাস্থ লালমনিরহাট সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার বর্মনের সঞ্চালনায় ও সভাপতি শামসুল হক বসুনিয়ার সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,নর্থ বেঙ্গল জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি মোদাব্বের হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য মাহমুদুর রহমান খোকন,সাংবাদিক সমীরণ রায়, জয়নুল আবেদিন, তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক ও লালমনিরহাট সাংবাদিক ফোরামের সদস্য সাহেদুজ্জামান সাকিব, লালমনিরহাটের এসএ টিভির সাংবাদিক আশিকুর রহমান ডিফেন্স,সময়ের আলো পত্রিকার সাংবাদিক তন্ময় আহমেদ নয়ন,সাংবাদিক মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ।এছাড়াও সকাল সকাল ১১টায় লালমনিরহাটে বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের আয়োজনে শহরের মিশনমোড় চত্বরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।বাংলাদেশ প্রেসক্লাব লালমনিরহাট জেলা সভাপতি এসআর শরিফুল ইসলাম রতনের সভাপতিত্বে এসময় অন্যানের মধ্যেমে সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীন,মিলন পাটোয়ারী, হেলাল কবীর,মাসুদ রানা রাশেদসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।বেলা ১২টার দিকে লালমনিরহাটে সাংবাদিকের উপর হামলা ও নিযাতনের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারসহ সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে জেলার পাচ উপজেলার ইউএনও এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১২ আগষ্ট শুক্রবার সংবাদ সংগ্রহ শেষে ফেরার পথে বিডিনিউজ ও যমুনা টিভির লালমনিরহাট প্রতিনিধিসহ চার গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলা চালানো হয়। হামলার শিকার সাংবাদিকরা জানান, লালমনিরহাটের সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান মন্ডলের পুত্র সুলতান মন্ডল সম্প্রতি দুই সন্তানের মা এক নারীকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। তিনি নিজেও দুই সন্তানের জনক। এ ঘটনার জেরে গত ৪ দিন আগে তার প্রথম স্ত্রী বিষপান করেন। এদিকে এ নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন সুলতানের দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রথম পক্ষের স্বামী। বিষয়টি এলাকায় চাউর হয়ে গেলে প্রকৃত ঘটনা জানতে সেখানে উপস্থিত হন যমুনা টিভি,বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও আজকের পত্রিকার লালমনিরহাট প্রতিনিধি আনিছুর রহমান লাডলা, প্রথম আলোর আব্দুর রব সুজন, এখন টেলিভিশনের মাহফুজুল ইসলাম বকুল এবং যমুনা টিভির ক্যামেরাপারসন আহসান ইসলাম। সেখানে পরিবারের সাথে কথা বলে ফেরার সময় আওয়ামী লীগ নেতার পুত্র, তার সহযোগী সাহেব আলী মন্ডলসহ একদল দুর্বৃত্ত যমুনা টিভির ক্যামেরা এবং ট্রাইপট ছিনেয়ে নেয়। পরে ওই ট্রাইপট দিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। এসময় সাংবাদিক আনিছুর রহমান লাডলা গুরুতর আহত হন। তার মাথা ফেটে যায়,হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হন। শারীরিকভাবে আহত হন অন্যান্যরাও। পরে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।এঘটনা ১৩ আগষ্ট লালমনিরহাট সদর থানায় মামলা করেন সাংবাদিক আনিছুর রহমান লাডলা।সেই মামলার প্রধান আসামী সাহেব আলী মন্ডলকে ১৪ আগষ্ট কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে লালমনিরহাট অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাহেব আলী মন্ডলের জামিন আবেদন করলে ওই আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো.আহসান হাবিব তার জামিন নামন্জুর করেন।