যমুনা টেলিভিশন,আজকের পত্রিকা ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি আনিছুর রহমান লাডলা, প্রথম আলোর সাংবাদিক আব্দুর রব সুজন,এ্রখন টিভির মাহফুজুল হক বকুল ও যমুনা টিভির ক্যামেরা পারসন আহসান ইসলামসহ চার সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় নিন্দার ঝড়।হামলার প্রতিবাদ ও আসামী গ্রেফতারের দাবিতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় চলছে মানববন্ধন। রোববার বিকেলে প্রধান আসামি সাহেব মন্ডল (৩৫)কে গ্রেফতার করেছে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ।
রোববার বিকেলে লালমনিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতার সাহেব মন্ডল সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আজিজার রহমান মন্ডলের ছেলে।
লালমনিরহাট সদর থানার ওসি এরশাদুল আলম বলেন, আহত যমুনা টিভির সাংবাদিক আনিছুর রহমান লাডলার অভিযোগ দায়েরের পর অভিযান শুরু করা হয়। এরপর কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট থানা পুলিশকে অবগত করে উপজেলার সিঙ্গারডাবরি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আহত প্রথম আলোর সাংবাদিক আব্দুর রব সুজন বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে আমরা ৪/৫ জন সাংবাদিক লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নে গেলে আজিজার রহমান মন্ডলের ছেলে সাহেব মন্ডলসহ আরো কয়েকজন হামলা করে মারপিট করে। এসময় যমুনা টিভি ও আজকের পত্রিকার সাংবাদিক আনিছুর রহমান লাডলাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার মাথায় আঘাত করলে তার মাথা ফেটে গুরুতর আহত হয়।
তিনি আরও বলেন, হামলাকারীরা ২০/২৫জন থাকায় তারা আমাদের সাথে থাকা ক্যামেরা, ক্যামেরার ট্রাইপোট, মোবাইল ফোন ও হেলমেট নিয়ে যায়। এ ঘটনায় যমুনা টিভির সাংবাদিক আনিছুর রহমান লাডলা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলার প্রধান আসামী সাহেব মন্ডলকে গ্রেফতার করেছে। এতে আমরা স্বস্তি পেয়েছি কিন্তু সন্তুষ্ট নই। কেননা মামলার অপর তিনজন নামীয় ও অজ্ঞাত কোন আসামীকে গ্রেফতার করা হয় নাই।
লালমনিরহাট সদর থানার ওসি এরশাদুল আলম বলেন, এ ঘটনায় লালমনিরহাট সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে। প্রধান হামলাকারী সাহেবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্যদেরও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আজিজার রহমান মন্ডলের ছোট ছেলে সুলতান মন্ডল একই এলাকার দুই সন্তানের জননীকে ফুসলিয়ে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। পরে সুলতান মন্ডলের আগের স্ত্রী বিষয়টি জানতে পেরে আত্মহত্যার জন্য বিষ খাইলে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনাটি সাংবাদিকগন জানতে পারলে হাসপাতালে গেলে সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে অবশ্য জানা যায় সাংবাদিক আসার কথা শোনার পর পরই তারা হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছে। বিষয়টি লালমনিরহাট জেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
এর পরদিন ১২ আগষ্ট শুক্রবার বিকেলে যমুনা টিভি, প্রথম আলো ও এখন টিভির সাংবাদিকসহ কয়েকজন সাংবাদিক ওই বিষয়ে সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নে তথ্য সংগ্রহ করতে যায়। তথ্য সংগ্রহ করে ফেরার পথে সাহেদ মন্ডল,সুলতান,শাহজাহান,আজিজার মন্ডলের নেতৃত্বে ১৫/২০ জন সন্ত্রাসী নিয়ে পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সাকোরপাড় নামক স্থানে সাংবাদিকদের পথরোধ করে। পরে হামলাকারীরা সাংবাদিকের কাছে থাকা ক্যামেরা ট্রাইপড কেড়ে নিয়ে ক্যামেরা ভাংচুর করে এবং সাহেদ মন্ডল ক্যামেরার ট্রাইপড দিয়ে,সুলতান,শাহজাহান,আজিজারসহ অন্যান্য লাঠিশোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাংবাদিকদের এলোপাতারী আঘাত করতে থাকে। এসময় হামলাকারীরা ট্রাইপড দিয়ে যমুনা টিভির লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি আনিছুর রহমান লাডলার মাথায় আঘাত করলে তার মাথা ফেটে যায় এবং বাম হাতের কবজি মচকে যায়। এসময় যমুনা টিভির ক্যামেরাম্যান আহসান ইসলাম, প্রথম আলোর সাংবাদিক আব্দুর রব সুজন, এখন টিভির মাহফুজুর রহমান বকুলের উপর হামলা করে সন্ত্রাসীরা। এ সময় হামলাকারীরা সাংবাদিকদের সাথে থাকা ক্যামেরা,ট্রাইপড, মোবাইল ও হেলমেট কেড়ে নিয়ে যায়। পরে মুমূর্ষ অবস্থায় সাংবাদিকদের উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে যমুনা টিভির সাংবাদিক আনিছুর রহমান লাডলা লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ওইদিন রাতেই যমুনা টিভির লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি আনিছুর রহমান লাডলা বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০/২১ জনকে আসামী করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
সাংবাদিকদের উপর এমন বর্বর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব, সুশিল সমাজসহ জেলার আপামর জনসাধারণ।
সন্ধ্যার পরে সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে রাতেই লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক,জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু,পৌর মেয়র রেজাউল করিম স্বপন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুর হক,সদর থানার ওসি এরশাদুল আলম, জেলা জাতীয় পাটির সাধারন সম্পাদক লিমন,জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি,সেক্রেটারীসহ জেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সামজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।পরেরদিন সকালে জেলা প্রশাসক আবু জাফর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাংবাদিক আনিছুর রহমান লাডলাকে দেখতে যান।