লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আবারও ভয়াবহ বন্যার প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
বুধবার বিকেলে লালমনিরহাটের শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২৮সেন্টিমিটার উপরে ও তিস্তা নদী ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭ সে. মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।এছাড়া জলাবদ্ধতার কারনে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলগুলো পানিবন্দি হয়েছে মানুষজন। এছাড়াও বন্যা তথ্য কেন্দ্র আগামী ২৪ ঘন্টায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির পূর্বাভাস দিয়েছেন। এই বছরে তৃতীয় দফা বন্যায় অসহায় হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধিতে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী,দোয়ানী,ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিঙ্গীমারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া,হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৌলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি,রুদ্রেশ্বর ,আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা,কালমাটি,পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ,কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ি,রাজপুর,গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পানি প্রবেশে ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গত ১৪দিন আগের বন্যার জের কাটতে না কাটতেই আবারও বন্যা মরার ওপর খড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে। খাদ্য ও নিরাপদ পানি সংকট, ও পয়োঃনিস্কাশন ব্যাবস্থা অবনতি সহ স্বাভাবিক চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পানিবন্দী এসব মানুষ। নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় স্বাভাবিক চলাচল ব্যহত হয়ে পড়েছে। পশুপাখি ও গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন এসব বানভাসি মানুষ। গরু ছাগলের খাদ্য-সংকট সহ নিরাপদ স্থানে রাখতেও ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা। গত ২৪ ঘন্টায় লালমনিরহাট জেলায় ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও আগামী ২৪ ঘন্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা ও ধরলা পাড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির পূর্বাভাস জানিয়েছেন বন্যা তথ্য কেন্দ্র।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার চর ফলিমারী গ্রামের মিনা বেগম জানান, বাড়িতে পানি উঠায় দুইদিন ধরে স্কুল ঘরে গরু,ছাগল,হাঁস,মুরগী নিয়ে বসবাস করছি।এখনো কোন ত্রান পাইনি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন,আগের বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই গত মঙ্গলবার রাত থেকে ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পুনরায় নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।এ ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। কিছু কিছু এলাকা নতুন করে পানিবন্দি হওয়ায় তাদের মাঝে ত্রান দেওয়া সম্ভব হয়নি।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, তিস্তা ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় পানি আরও বাড়তে পারে। আমরা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর জানান,এর আগের বন্যায় পানিবন্দি মানুষজনের মাঝে ত্রান দেওয়া হয়েছিল।এবার তালিকা পেলে আবারো ত্রান দেওয়া হবে।ত্রান পযাপ্ত রয়েছে বলে তিনি জানান।