অবকাঠামোর অনন্যতা কিংবা উন্নয়নের ভিত ছাপিয়ে পদ্মা সেতু বাংলাদেশের কাছে আরও বড় কিছু, সেতুটি উদ্বোধন করে তাই বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতু উদ্বোধন করে গাড়িতে করে তা পাড়ি দিয়ে জাজিরা প্রান্তে পৌঁছে পূর্ব নির্ধারিত জনসভায় তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু নির্মাণে যারা বাধা দিয়েছিল, তাদের একটা জবাব আমরা দিয়েছি। তাদেরকে একটা উপযৃক্ত জবাব আমরা পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে দিতে পারলাম যে, বাংলাদেশও পারে।”
অভিযোগ তুলে বিশ্ব ব্যাংকের সরে যাওয়া, তা ধরে দেশে সমালোচনা, আর নানা মহলের সংশয় পেরিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে যে সেতু নির্মাণের শুরু করেছিল শেখ হাসিনার সরকার, তা পূর্ণতা পেল শনিবার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে।
শেখ হাসিনা বলেন, “২০০১ সালে আমরা পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর খালেদা জিয়া এসে তা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আবার নির্মাণ কাজ শুরু করি।
“তখন তারা কী বলেছিল ? বলেছিল,আওয়ামী লীগ কোনোদিন নাকি পদ্মা সেতু করতে পারবে না। খালেদা জিয়াকে আজকে জিজ্ঞেস করি- আসুন, দেখে যান, পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে কি না।”
দুর্নীতি নয়, বরং মুহাম্মদ ইউনূসের তদ্বিরেই পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে বিশ্ব ব্যাংক সরে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দুর্নীতির সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,কে দুর্নীতি করেছে? এই সেতু আমাদের প্রাণের সেতু। যে সেতুর সাথে আমার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য জড়িত,সেই সেতু করতে যেয়ে কেন দুর্নীতি হবে?
বিশ্ব ব্যাংককে বাদ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভবপর নয় বলে যারা নিরুৎসাহিত করেছিলেন, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন,আজকে কীভাবে করতে পারলাম?”
“আপনারা এই দেশের জনগণ আমাকে সমর্থন দিয়েছেন, পাশে থেকেছেন। জনগণের শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি। আমি সেটাই বিশ্বাস করেছি।”
পদ্মা সেতু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সুবিধার দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আর আপনাদের কষ্ট করতে হবে না। এই খরস্রোতা পদ্মা নদী পার হতে যেয়ে আর কাউকে সন্তান হারাতে হবে না, বাবা-মাকে, ভাই-বোনকে হারাতে হবে না। আজকে সেখানে আপনারা নির্বিঘ্নে চলতে পারবেন। সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।
“আমাদের প্রত্যেকটা এলাকা এত দুর্গম ছিল, আজকে সেখানে রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ করেছি বলেই সব জায়গায় যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে। এই এলাকার লোক যেন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সেজন্য পায়রা পর্যন্ত আমরা সেতু বানিয়ে দিয়েছি। এখন নিশ্চিন্তে মানুষ চলাফেরা করতে পারে।”
পদ্মা সেতু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক কমকাণ্ডে গতি আসার সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “সারাদেশে আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। আজকে পদ্মা সেতু হয়েছে। এখানেও বিশেষ অর্থনতিক অঞ্চল হবে, শিল্পাঞ্চল হবে, কর্মসংস্থান হবে, কল-কারখানা হবে, আমাদের ফসল উৎপাদন হবে। সেই ফসল আমরা প্রক্রিয়াজাত করতে পারব। দেশে-বিদেশে রপ্তানি করতে পারব। এখানে যে মাছ হবে, তা আমরা প্রক্রিয়াজাত করে দেশে-বিদেশে পাঠাতে পারব। বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ ঘুচে যাবে। ভাগ্য পরিবর্তন হবে।”
খাদ্যের চাহিদা পূরণে সবাইকে ফসল উৎপাদনের দিকে জোর দিতে বলেন তিনি।
আগামী বর্ষাকালে এ অঞ্চলে বন্যা হতে পারে বলে সতর্ক করে শেখ হাসিনা বলেন,“এখন থেকে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি, আপনারাও প্রস্তুতি নিতে থাকেন। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার শক্তি বাংলাদেশ রাখে।”
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য আজকের দিনটি ‘বিশেষ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন,এই শরীয়তপুরে যখন এসেছি, তখন কী ছিল? লঞ্চে করে এসেছি, লঞ্চ নষ্ট হয়ে গেছে। নৌকায় করে একেকটা এলাকায় গিয়েছি, মিটিং করেছি। আজকে সেই শরীয়তপুরে অবস্থা পাল্টে গেছে।
“কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে রাস্তাঘাট, ব্রিজের উন্নয়ন হয়েছে। মাদারীপুরেও একই অবস্থা ছিল। গোপালগঞ্জ যেতে ২২ ঘণ্টা সময় লাগত। প্রত্যেকটা এলাকা এত দুর্গম ছিল। রাস্তাঘাট করেছি বলেই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে।”
আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই জনসভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “বঙ্গবন্ধুকন্যা আপস করেননি। সাহসের সাথে এগিয়ে গেছেন, চক্রান্ত আর সব বাধাকে অতিক্রম করে, তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, বাঙালি বীরের জাতি।
“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকে নিজের নাম পদ্মার সাথে যুক্ত করেননি। কিন্তু বাংলার জনগণ জানে, বাংলার জনগণের হৃদয়ে আজকে তিনি যে স্মৃতি, যে আবেগ, যে ভালোবাসা গেঁথে দিলেন, যতদিন এ পদ্মা সেতু থাকবে, যতদিন এখানে চন্দ্র সূর্য উদয় হবে, ততদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আপনাকেও স্মরণ করবে।”
আজকে বিএনপির মুখে ‘শ্রাবণের আকাশের মেঘ জড়ো হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
“আজকে সবাই খুশি, সবার মুখে আনন্দের হাসি, আর বিএনপির মুখে শ্রাবণের আকাশের মেঘ-শেখ হাসিনা এত ষড়যন্ত্র,এত কূটচাল, তারপরও পদ্মা সেতু করে ফেললেন? মির্জা ফখরুলের মন খারাপ। মন খারাপ! বুকে বড় ব্যথা। জ্বালায় জ্বালায় মরছে তারা।