দেশে প্রথমবারের মতো ‘বাংলাদেশ পুলিশ জাদুঘর’ যাত্রা শুরু করলো লালমনিরহাটে। বুধবার লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থানা চত্বরে নির্মিত এ জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক(আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। থানা চত্বরে ব্রিটিশ শাষনামলের ভবনটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে পুলিশের আইজিপি থানা চত্বরে পৌঁছলে একটি চৌকস দল তাঁকে গার্ড অব অর্নার প্রদান করেন। এরপর তিনি ফিতা কেটে ও ফলক উন্মোচন করে জাদুঘরের উদ্বোধন শেষে তা ঘুরে দেখেন। পরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তিনি। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন রংপুর পুলিশের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য ও লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা। অনুষ্ঠানে পুলিশ, বিজিবিসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাসহ রাজনীতিক, শিক্ষক ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা একটা ইতিহাসের স্বাক্ষী হলাম। হাতীবান্ধায় যে পুলিশ জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়েছে সেটাকে প্রাথমিকভাবে পুলিশের কার্যক্রম মনে হতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি আমাদের জাতিগত অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে একটি অন্যতম সন্নিবেশন। কারণ এখানে অনেক ইতিহাস কথা বলছে। তিনি আরও বলেন, ‘যারা গবেষক যারা বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করেন যারা ভবিষ্যতে পুলিশ বহিনীতে করবেন তাদের অন্যতম আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হবে এ জাদুঘর’।
জাদুঘরটি লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা থানা চত্বরে ১৯১৬ সালে নির্মিত একটি পাকা ভবনে অবস্থিত। ঐতিহাসিক একটি দালানকে জাদুঘরে রূপান্তরের উদ্যোগ নেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা (বিপিএম,পিপিএম)। বাংলাদেশ পুলিশ জাদুঘর লালমনিরহাটে মোট সাতটি গ্যালারি রয়েছে। প্রতিটি গ্যালারিতে রাখা নিদর্শনগুলো দর্শক ও গবেষকদের সামনে তুলে ধরতে কাচের আবরণ ও আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই জাদুঘরে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ বাহিনীর নানা স্মারক ও তথ্য সবার জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রাচীন এই ভবনের ঐতিহ্ন্যও রক্ষা করা হয়েছে এই জাদুঘরের মাধ্যমে। ৭টি গ্যালারির মধ্যে প্রথমটিতে থাকছে সুলতানি ও মোঘল আমল ভারতীয় উপমহাদেশে পুলিশের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে তুলে ধরা হচ্ছে। গ্যালারি দুইয়ে এ থাকছে ব্রিটিশ আমল, আধুনিক পুলিশের যাত্রা। তিন নম্বর গ্যালারিতে রয়েছে পাকিস্তান আমল ভারতীয় উপমহাদেশ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশ। গ্যালারি চারে থাকছে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনসহ বাংলাদেশের ইতিহাস। এভাবে পাঁচে রয়েছে মুক্তাঞ্চলে মুক্তি পুলিশ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৬ নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ছিল লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে। সে সময় গঠন করা হয়েছিল মুক্তাঞ্চলের মুক্তি পুলিশ। ওই সময়ের কর্মকান্ড তুলে ধরাসহ নানান নিদর্শন থাকছে এই গ্যালারিতে। গ্যালারি ছয়ে আছে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। গ্যালারি সাতে রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ গ্যালারি, আধুনিক সময়কাল। যাদুঘরে এছাড়াও থাকছে পুলিশ যানবাহন ও শিশু কর্নারে থাকছে শিশু বান্ধব পুলিশিং। যাদুঘরের অুনষ্টানের শেষে বিকেলে পুলিশ প্রধান তিনবিঘা করিডোরে যান ।সেখানে ভারতীয় বিএসএফ অভ্যথনাসহ ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।এরপর তিনি দহগ্রাম পুলিশ ফাঁড়ি পরিদশনের পর সেখানে বৃক্ষরোপন করেন।
পুলিশ যাদুঘরে যে কেউ দশ টাকা মূল্য দিয়ে প্রবেশাধিকারের সুযোগ পাচ্ছে। সময় সূচী হিসেবে গ্রীষ্মকালে শনি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ৬টা পর্যন্ত আর শীতকালে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে যাদুঘরটি। শুক্রবারও বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সাপ্তাহিক বন্ধ হিসেবে রাখা হয়েছে বুধবারের দিনটি।
২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি লালমনিরহাট জেলায় পুলিশ সুপার এসপি হিসেবে যোগদান করেন আবিদা সুলতানা। সেই সময়েই জানতে পারেন হাতীবান্ধা থানার একটি প্রাচীন পাকা ভবনের কথা। এই ভবন ভেঙে না ফেলে বা নিলামে তুলে বিক্রি না করে কীভাবে ঐতিহ্য হিসেবে এটি রক্ষা করা যায়, সেটি মাথায় রেখেই শুরু করেন ভাবনা চিন্তা।