ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নিবন্ধন হারানো জামায়াত ও বিএনপির দেওয়া কর্মসূচিতে নাশকতা হলে তা মোকাবিলার প্রস্তুতি পুলিশের রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) নির্বাচন ভবনে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় আয়োজিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় সেজন্য যে কার্যক্রম নেওয়া দরকার সেসব বিষয় নিয়ে ইসি থেকে সিইসিসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিশেষ করে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ যারা রয়েছেন তাদের সঙ্গে নিয়ে যে সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার এই বৈঠকে তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, বৈঠকটি ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের। অর্থাৎ নগর, মহানগর ও আশেপাশের কয়েকটি জেলা নিয়ে। সে সমস্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভাও বলা যেতে পারে। যাতে কোনো সহিংসতা না হয় এবং তৃতীয় পক্ষ যেন কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে এবং সমস্যা সৃষ্টি করলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
ভোট প্রতিহত করার জন্য অসহযোগ আন্দোলন, কোথাও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে আপনাদের অবস্থান কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যান্য জাতীয় নির্বাচনের সময় অংশীজন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একমুখী সমস্যা থাকে, সেটা হলো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তার সমর্থকদের আচরণ বিধি মানতে বাধ্য করা, সহিংসতা এড়াতে যে সমস্ত কার্যক্রম নিতে হয় সেগুলো। কিন্তু এবারের নির্বাচনে দুটি দলের (জামায়াত ও বিএনপি) আহুত প্রোগ্রামকে সামনে রেখে আতঙ্ক, শঙ্কা সৃষ্টি করার একটি পরিবেশের তৈরি হয়েছে। তবে সমস্ত শঙ্কা মোকাবিলা করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ গড়ে তোলার মতো সক্ষমতা ডিএমপি ও বাংলাদেশ পুলিশের রয়েছে।
রেলে নাশকতার প্রসঙ্গ সামনে আনলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কেবল একটি নাশকতা নয়। বিশেষ করে অক্টোবরের ২৮ তারিখের পর থেকে এই পর্যন্ত বিভিন্নভাবে জ্বালাও, পোড়াও ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। এর বেশিরভাগই কিন্তু পুলিশ উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আমাদের তৎপরতা চলছে। বাকিদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। এমন ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য বিভিন্ন ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে, পুলিশ সজাগ রয়েছে। অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও পুলিশের সঙ্গে রয়েছে। ট্রেন বা ট্রেনের লাইনের যেন কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য আনসারকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ভোটকেন্দ্রে সকালে ব্যালট পেপার পাঠানোর বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ইসির নির্দেশনা মানতে সকলে আসলে বাধ্য। যারাই ইসির অধীনে কাজ করছে, তারাই এটি মেনে নিয়েছে যে, ভোটের আগেরদিন নির্বাচনী অন্যান্য উপকরণ কেন্দ্রে যাবে, সকালে যাবে ব্যালট। এজন্য নির্বাচন কমিশন আগে এটা পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন নির্বাচনে করেছে। এতে কোনো সমস্যা হবে না। সকলের প্রচেষ্টা থাকলে এই ভোটযুদ্ধ সুন্দরভাবে হবে বলেও আশা করেন তিনি।
পুলিশের রদবদলের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা সম্পূর্ণ বজায় রয়েছে। সকলেই ইসির নির্দেশনায় কাজ করতে বদ্ধপরিকর। সরকার বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের মুখোমুখি কিন্তু আমরা এখনো হইনি। পুরোপুরি ইসি নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছি।
ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি আরো বলেন, উৎসবমুখর ভোটের আয়োজন করতে পুলিশ অনেকখানি সফল হয়েছে। সবাই একসঙ্গে হয়ে একটি উৎসবমুখর ভোট উপহার দিতে পারবো। অতীতের মতো এবারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে এর আগে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ঢাকা অঞ্চলের আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। রুদ্ধদ্বার সাড়ে তিন ঘণ্টার ওই বৈঠকে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল, ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।