দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৪ দফার ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।
জাতীয় পার্টির ইশতেহারে বলা হয়েছে–
ক্ষমতায় গেলে জাতীয় পার্টি দেশে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করবে। আট বিভাগকে আটটি প্রদেশে উন্নীত করা হবে। নাম হবে– উত্তরবঙ্গ প্রদেশ, বরেণ্য প্রদেশ, জাহাঙ্গীরনগর প্রদেশ, জাহানাবাদ প্রদেশ, জালালাবাদ প্রদেশ, চন্দ্রদ্বীপ প্রদেশ, ময়নামতি প্রদেশ ও চট্টলা প্রদেশ।
সরকার কাঠামো হবে দুই স্তরবিশিষ্ট। কেন্দ্রীয় সরকারকে বলা হবে ফেডারেল সরকার। থাকবে ৩০০ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য। আর প্রদেশ চালাবে প্রাদেশিক সরকার।
থাকবে প্রাদেশিক সংসদ সদস্য। প্রতিটি উপজেলা কিংবা থানাকে প্রাদেশিক সরকারের আসন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ঢাকা থেকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ সদর দপ্তর প্রাদেশিক রাজধানীতে স্থানান্তর করা হবে।
নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করবে জাতীয় পার্টি। বর্তমান ব্যবস্থার বদলে ভোটের আনুপাতিক হারে জয়-পরাজয় নির্ধারণের ব্যবস্থা করা হবে। নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হবে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’।
উপজেলা আদালত ও পারিবারিক আদালতসহ পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা চালু করে স্থানীয় সরকার কাঠামো শক্তিশালী করতে চায় জাতীয় পার্টি। উপজেলার ক্ষমতা উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে হস্তান্তর করবে তারা।
জাতীয় পার্টি বিচার বিভাগ ও ইসিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখবে। বাজেট ও সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ছাড়া ৭০ ধারা সংশোধনের মাধ্যমে সব প্রতিনিধিকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আওতায় এনে সংসদকে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
ক্ষমতায় গেলে নিবর্তনমূলক কালো আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করবে জাতীয় পার্টি। নিম্ন আদালত ও বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হবে। বিচারকদের সব প্রকার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে।
প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণভাবে পৃথক করতে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে।
বিচার প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থার অনিয়ম, দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রিতা ও অব্যবস্থার মূল কারণ উদঘাটন করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় পর্যায়ে গঠন করা হবে কমিশন, যা ছয় মাসের মধ্যে তাদের সুপারিশ দেবে। দেশের বিজ্ঞ আইনজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় আইন কমিশন গঠন করবে দলটি।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষা ব্যাপক প্রসার ঘটানো হবে। গ্রাম ও শহরে ওয়ার্ড পর্যায় থেকে বেকার তরুণ-তরুণীদের তালিকা প্রণয়ন করা হবে। যোগ্যতা অনুসারে বেকারদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র নিরূপণ করা হবে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বেকার তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত সরকারিভাবে তাদের ভাতা দেওয়া হবে।
আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ সেবা নিশ্চিত করতে ও জনসংখ্যা বাড়ার হার শতকরা একের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করা হবে।
সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কর্মমুখী শিক্ষায় বেশি জোর দেওয়া হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূর, ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে বিজ্ঞান শিক্ষার সমন্বয় করাবে জাপা। কমানো হবে শিক্ষা উপকরণের দাম। দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল পাসের মান এসএসসি, এইচএসসি, বিএ ও এমএর সমপর্যায়ে করা হবে।
ক্ষমতায় গেলে দলটি কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করবে না। সরকারকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়ার উদ্দেশে দেশের বিশিষ্ট আলেম ও ইসলামি চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয়ে একটি ইসলামিক কমিশন গঠন করবে, রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামী মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখবে। এ ছাড়া বিশ্ব ইজতেমা প্রাঙ্গণে ১০ লাখ লোকের স্থান সংকুলানের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা করা হবে।
সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থানে থাকবে দলটি। কৃষিভিত্তিক শিল্প নগরী গড়ে তোলা হবে। খাদ্যে ভেজাল, বিষাক্ত পদার্থ মেশানোর বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হবে।
নতজানু নীতি পরিহার করে সমঝোতাপূর্ণ কূটনৈতিক দক্ষতা দেখাতে চায় জাতীয় পার্টি। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন পর্যায়ক্রমে বাড়াতে চায় দলটি।
দেশ এখন ভয়াবহ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে উল্লেখ করে দলটি ইশতেহারে বলা হয়েছে, গোটা বিশ্ব এখন নতুন শতাব্দীতে পদার্পণ করছে। এ সময় বিশ্বের দেশসমূহ নতুন তথ্যপ্রযুক্তি, অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আর পিছিয়ে পড়ে থাকার অবকাশ নেই।
জাতীয় পার্টি ৯ বছরের শাসন দেশের কল্যাণ ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছিল। আজ সে কারণে জনসাধারণের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সামগ্রিক জীবনে সেই সময় স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। জাতীয় পার্টি এখন সুখী, সমৃদ্ধ ও আধুনিক দেশ গড়ার লক্ষ্যে অঙ্গীকারবদ্ধ।