খুলনায় প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে করা ,আলোচিত সুলতানা পারভীন নীলা ওরফে বৃষ্টির বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন আদালত। অভিযোগ রয়েছে, সৌন্দর্যকে পুঁজি করে প্রতারণার মাধ্যমে নাম পাল্টে এবং কুমারী পরিচয় দিয়ে আটটি বিয়ে করেছেন তিনি।
সব বিয়েই তিনি ছাড়াছাড়ি করেছেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। প্রতারণার দায়ে জেলও খেটেছেন তিনি।
প্রতারণার শিকার সাবেক স্বামী ঠিকাদার মইনুল আরেফিন বনির মামলায় সম্প্রতি খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এ সমন জারি করেন। এ সংক্রান্ত আদেশ সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়েছে। ৫ডিসেম্বর( মঙ্গলবার ) এ তথ্য জানিয়েছেন আইনজীবী মো. আসাদুল আলম।
মামলার এজাহার এবং স্থানীয় সূত্রে গেছে, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ওই নারীর নাম সুলতানা পারভীন ওরফে নীলা। যদিও তিনি প্রতারণার জন্য কখনো নিজেকে সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি, কখনো রুমাইনা ইয়াসমিন রূপা, নাজিয়া শিরিন শিলা, স্নিগ্ধা আকতার নামেও পরিচয় দেন। নিজের সৌন্দর্য এবং কথার জালে আটকান প্রবাসী, ধনী এবং ব্যবসায়ীদের। নিজেকে কুমারী পরিচয় দিয়ে তার আটটি বিয়ে করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সব বিয়েই ছাড়াছাড়ি হয়েছে বিয়ের অল্প কিছু দিনের মধ্যে। মামলার ভয় দেওয়াসহ বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিয়ে কৌশলে টাকা, বাড়ি নিয়েছেন নিজের করে। এসব বিয়ের ফাঁদে পড়া ব্যক্তিদের করেছেন সর্বস্বান্ত।
বারবার বিয়ে করা এবং অর্থ সম্পদ নিয়ে ছাড়াছাড়ির মতো প্রতারণাই এই নারীর মূল পেশা। নীলার এই প্রতারণা পেশার প্রধান সহকারী তার ভাই এবং পরিবার। গত বছর এমন প্রতারণা করতে গিয়ে এক মামলায় জেলও খেটেছেন তিনি। এছাড়াও তার রয়েছে অসংখ্য বয়ফ্রেন্ড। সরকারি আমলা, রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গেও ওঠা-বসা আছে তার।
এজাহার থেকে জানা যায়, ১৯৯৯ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়স সুলতানা পারভীন ওরফে নীলার প্রথম বিয়ে হয় মাদারীপুর জেলার হরিকুমারিয়া গ্রামের আব্দুল হাকিম শিকদারের জাপান প্রবাসী ছেলে শাহাবউদ্দিন সিকদারের সঙ্গে। তার উশৃঙ্খল জীবনযাপন ও মালামাল চুরির ঘটনায় মাদারীপুর সদর থানায় একটি জিডি করেন শাহাবউদ্দিন। যার নম্বর ৭৩৮, ১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৯। পরে ২০০১ সালে শাহাবউদ্দিনের সঙ্গে বৃষ্টির বিচ্ছেদ হয়।
দ্বিতীয় বিয়ে হয় ২০০৫ সালে এসএম মুনির হোসেনের সঙ্গে। ২০০৮ সালের এপ্রিলে বিয়ে করেন খুলনা নগরীর খালিশপুর এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে ঠিকাদার মইনুল আরেফিন বনিকে। নিজেকে কুমারী পরিচয় দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ায় বৃষ্টির বিরুদ্ধে মামলা করেন বনি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাটি করা হয়। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন তবে যথারীতি টাকা আদায় করতে বনির বিরুদ্ধেও খুলনার বিভিন্ন আদালতে একাধিক মামলা করেন বৃষ্টি।
বনির সঙ্গে মামলা চললেও ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জের ইফতিখার নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন। এরপর ২০১২ সালে বিয়ে করেন বাগেরহাটের বাসিন্দা কামাল হোসেনকে। ২০১৭ সালে ইতালি প্রবাসী মাদারীপুরের মোহাম্মদ আজিমকে, ২০১৮ সালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মোহাম্মদ রহমানকে এবং ২০১৯ সালে খুলনা মহানগরীর নাজির ঘাট এলাকার মো. আব্দুল বাকীকে বিয়ে করেন। আট নম্বর স্বামী মো. আব্দুল বাকীর সঙ্গে প্রতারণা করায় নীলার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে চেক ও টাকা-পয়সা চুরির অভিযোগে মামলা করা হয়। মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ কার্যালয়ে তদন্তাধীন। এছাড়া সিরাজগঞ্জে থাকার সময় ঢাকার একটি ফ্ল্যাট নিজের নামে লিখে না দেওয়ায় আরও এক স্বামীকে নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসানো হয়। ওই ঘটনায় প্রতারক নীলার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২ মে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় জিডি করা হয়।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে খুলনা মহানগরীর খালিশপুরে আফরীন আহমেদ নামে এক আত্মীয়ের বাসায় কিছুদিন থাকেন সুলতানা পারভীন ওরফে নীলা। সেই সুযোগে আত্মীয়ের বাসা থেকে একটি চেকের পাতা চুরি করে অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে নেন। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও চুরির অভিযোগে মামলা করা হয়। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই খুলনা কার্যালয়ে তদন্তাধীন।
প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের অভিযোগ, নীলা এভাবে প্রতিটি বিয়ে করেছেন নিজেকে কুমারী পরিচয় দিয়ে। বিয়ের পর মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে স্বামীদের কাছ থেকে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। বৃষ্টির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দুই স্বামী মারাও গেছেন।
খুলনা জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের অনুমোদিত তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সুলতানা পারভীনের নিকাহ রেজিস্ট্রিকারী মাওলানা এএসএম নুরুল হক। তিনি বৈধ নিবন্ধিত নিকাহ রেজিস্ট্রার নন। এই ভুয়া নিকাহ রেজিস্ট্রার দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ের কাজটি করতেন তিনি। বিয়ের পর সংসার চালানো, নিজের খরচ, দেনমোহর ও স্বামীর থাকা ফ্ল্যাট নিজের নামে করতে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতেন নীলা।
যে মামলায় নীলার বিরুদ্ধে সমন জারি হয়েছে, সেটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে করেছিলেন প্রতারণার শিকার স্বামী মইনুল আরেফিন বনি। মামলাটি তদন্তাধীন ছিল। এর মধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ে আদালতে। কিন্তু নীলা আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে সমন জারি করলেন আদালত।
এই মামলার আইনজীবী মো. আসাদুল আলম জানান, আসামিপক্ষকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেছেন আদালত। নির্দিষ্ট তারিখে আদালতে হাজির না হলে ওয়ারেন্ট জারি হয়ে যেতে পারে।