লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুগাপুর ইউনিয়নের দীঘলটারী(কুমারটারী)গ্রামের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পাশে শুক্রবার দুপুরে রফিকুল ইসলাম ট্রেরে(২২) নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতীয় দুবৃত্তরা। আজ দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের সীমান্তঘেসা গ্রাম কুমারটারী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।নিহত রফিকুল ইসলাম ট্রেরে মোগলহাট ইউনিয়নের কনপুর এলাকার মৃত হায়দার আলীর ছেলে।
এলাকাবাসী জানায়, রফিকুল ইসলাম ট্রেরে তাদের নিজস্ব পাট ক্ষেত দেখতে সীমান্তবর্তী কুমারটারী এলাকায় ভারতীয় সীমান্তের ৯২৭ নং পিলারের সাব পিলার ৩/ এসের কাছে যায়। এসময় রফিকুলের দুই বন্ধু রবিউল ও সোহেল তার সাথে ছিল। পরে ভারতীয় সীমান্তের গিতালদহ থানার নগরটারী গ্রামের দৃবৃত্তরা রফিকুলকে গুলি হত্যা করে। এ সময় তারা গুলিবিদ্ধ রফিকুলকে দালাইনামা ছড়ায় ভেলায় করে ভাসিয়ে দেয়।ওই ভেলায় নিহত রফিকুলের বন্ধু সোহেল ও রবিউল বাংলাদেশ অংশে এসে সটকে পড়েন। পরে ইব্রাহিম নামের এক জেলে স্থানীয় মানুষজনকে খবর দিলে তারা বিজিবিকে খবর দেয়। স্থানীয় মোগলহাট ক্যাম্পের বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে থানা পুলিশকে খবর দেয়।পরে বিকেলে আদিতমারী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে আদিতমারী থানায় নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শতে মোগলহাট এলাকার একাধিক ব্যাক্তি জানান,  ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা থানার গিদালদহ ব্লকের দরিবস এলাকার বাসিন্দা কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান ওরফে ফকরা বাবু  ঈদের দুইদিন আগে (গত ২৭ জুন) দরিবস এলাকায় দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মারা যান। ফকরা বাবু নিজেকে দ্বৈত নাগরিক পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের মোগলহাট এলাকায় মাদকের ব্যবসা করতো। বাংলাদেশের আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট ফখরা বাবু মোস্ট ওয়ারেন্ট আসামী ছিলেন। ফখরা বাবুর হত্যাকান্ড নিয়ে সীমান্ত এলাকায় চাপা উত্তেজনা ও অস্থিরতা  ছিল।

এদিকে নিহতের ছোটভাই শফিকুল ইসলাম জানান,এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।আমার ভাই ট্রেরেকে যারা সীমান্তে নিয়ে গেল এবং ভাইকে গুলি করে হত্যা করা হলো আর ওরা দুজন লাশ বাংলাদেশ অংশে রেখে এসে পালিয়ে গেলেনেএই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ বিচার চাই।

প্রত্যক্ষদশী জেলে ইব্রাহিম জানান,দালাইনামা ছড়ায় দুপুরে মাছ ধরার সময় সীমান্তের পাট ক্ষেতের কাছে গুলির শব্দ শুনি।এর কিছুক্ষন পর দেখতে পাই ভেলায় করে দুজন অসুস্থ একজনকে নিয়ে বাংলাদেশ অংশে আসছে।আমি তখন ছুটে যাই।গিয়ে দেখি রফিকুলের গলায় গুলি লেগেছে।ইতোমধ্যে তার দুই বন্ধু সোহেল ও রবিউল লাশ ভেলায় ফেলে চলে যায়।তখন আমি চিৎকার করি।তখন স্থানীয় মানুষজন এসে বিজিবিকে খবর দেয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৬জুলাই)আদিতমারী উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের দিঘলটারী সীমান্ত এলাকা থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে রহমত উল্লাহ ( ৩০) ও সুমন হক  (২৩) নামে দুই ভারতীয় নাগরিককে  আটক  করে  বিজিবি। পরে বিকালে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের ভারতীয় বিএসএফর নিকট হস্তান্তর করে বিজিবি। আটককৃতরা রহমত উল্লাহ ও সুমন হক ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা থানার ঝারি ধরলা গ্রামের বাসিন্দা। কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান ওরফে ফকরা বাবু হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামী তারা।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি  ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে: কর্নেল মোফাজ্জল হোসেন বলেন, বিএসএফ গুলি করেনি বলে তারা নিশ্চিত করেছে। কে বা কারা গুলি করেছে তা পুলিশ তদন্ত করে বের করবে ।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মোজাম্মেল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভারতীয় সীমান্তের ৯২৭ নংমেইন পিলারের ৩এর এস সাব পিলারের কাছ থেকে ওই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।।