বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ফসলের মাঠ। দিগন্ত পেরিয়ে চোখ যতদূর যায়, শুধুই সোনালী ফসল। মাঠ জুড়ে বোরো ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা। প্রখর রোদ মাথার উপরে, ভরা দুপুরেও থেমে নেই উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের কৃষক-কৃষাণীরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুত্রে জানা গেছে, এবছর জেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৭ হাজার ৭শত হেক্টর জমিতে। অর্জিত হয়েছে ৪৭ হাজার ৮৫০ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় ১৫০ হেক্টর জমিতে বেশী চাষাবাদ হয়েছে। অর্জিত ৪৭ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষমাত্রায় ফলনের হিসেব ধরা হয়েছে ৩ লক্ষ ১৫ হাজার ৮১০ মেট্রিক টন। বাজার ওঠা নামার গড় হিসেবে ১১শত টাকা মন, প্রতি কেজি ধানের বাজার মূল্য ২৭.৫ টাকা, এক মেট্রিক টনে গড় বাজার দর ২৭ হাজার ৫০০ টাকা। ৩ লক্ষ ১৫ হাজার ৮১০ মেট্রিক টন ধানের বাজার মূল্য ৮ শত ৬৮ কোটি ৭৭ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা যায়, আগাম সময়ে যারা বোরো ধান রোপন করেছে, সেই সব চাষিরা ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। অনেকে আবার জমিতে কেটে রাখা ধান ঘরে তোলা নিয়ে ব্যস্ত। নারীরাও সাহায্য করছে ধান কাটাই মাড়াইয়ের সময়। তবে অনেক জমিতে দেরি করে ধান রোপন করা হয়েছিলো। সেই সব জমির ধান কাটতে সময় লাগবে আরও দুই থেকে তিন সপ্তাহ। অনেক জমিতে কৃষি শ্রমিকের পরিবর্তে ধান কাটার কাজ করছে অত্যাধুনিক হারভেস্টার মেশিন। চাষিরা বলছে, হারভেস্টার মেশিন দিয়ে খুবই অল্প সময়ে শত শত বিঘা জমির ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষি শ্রমিকের চেয়ে অনেক কম দামে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে এই অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্য। কৃষি শ্রমিকের মাধ্যমে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ হচ্ছে চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। অপর দিকে হারভেস্টার মেশিনের সাহায্য প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ হচ্ছে মাত্র তিন হাজার টাকা। এছাড়াও অত্যাধুনিক হারভেস্টার মেশিনের সাহায্য ধান কাটলে ধান মাড়াই করার আর কোনও ঝামেলা থাকছে না।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের শিবেরকুটি এলাকার কৃষক আজিজার রহমান (৬০) বলেন, চলতি মৌসুমে আমি ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। ধানের ফসল দেখে আশা করা যায় প্রতি বিঘায় ২০-২২ মণ ধান উৎপাদন হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এই বছর সবার ধান ভালো হয়েছে। আমি ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু করেছি। প্রায় অর্ধেক জমির ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছি। একই এলাকার কৃষক আহেদুল ইসলাম বলেন, চারা রোপণ দেরিতে করেছিলাম। আমার ধান কাটতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। এর মধ্যেই খবর শোনা যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের। চিন্তায় আছি, এই সময় যদি ঝরো বাতাস আর শিলা বৃষ্টি হয়, তাহলে ধান ঘরে তুলতে পারবো না।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক হামিদুর রহমান মুকুল বলেন, এবছর বোরো চাষাবাদের ভালো ফলন হয়েছে। এমন ফসলে সন্তুষ্ট কৃষকরাও। আমরা মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক কৃষকদের তথ্য পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি। উত্তরের এই জেলায় ধান চাষাবাদে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানি করা হয় ধান।