লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় সুদের পাওনা টাকার জন্য জাকির হোসেন(২৫) নামে এক মাইক্রোবাস চালককে আটক করে মারধর করেন মাদক কারবারি সিরাজুল ও তার লোকজন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিডিও করলে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়ে অতর্কিতভাবে হামলা করেন সিরাজুল ও তার লোকজন। পরে স্থানীয় থানায় বিষয়টি অবগত করা হলে পুলিশ এসে ভুক্তভোগী জাকির হোসেনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। সেই ঘটনার ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে হাতীবান্ধায় থানায় সিরাজুলের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী জাকির হোসেন। এই ঘটনায় এর আগে ওইদিন বিকেলে সিরাজুলের বিরুদ্ধে থানায় আরও একটি লিখিত অভিযোগ করেন সাংবাদিক মাহমুদ হাসান।
ভুক্তভোগীরা হলেন,হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা এলাকার আবদার হোসেনের ছেলে জাকির হোসেন ও দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকার হাতীবান্ধা উপজেলা প্রতিনিধি মাহমুদ হাসান।
অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা আছে। এছাড়া সে পুলিশের সোর্স হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
জানা গেছে,হাতীবান্ধা উপজেলার মেসার্স ডি এস ফিলিং স্টেশন এলাকায় সুদের পাওনা টাকার জন্য চালক জাকিরকে আটক করে মারধর করেন মাদক কারবারি সিরাজুল ও তার লোকজন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিডিও করলে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়ে হামলা করেন সিরাজুল ও তার লোকজন। পরে স্থানীয় থানায় বিষয়টি অবগত করা হলে পুলিশ এসে ভুক্তভোগী জাকির হোসেনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে হাতীবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয় জাকির হোসেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জাকির হোসেন বলেন, আমি সিরাজুলের নিকট থেকে ১০হাজার টাকা সুদের উপর নিয়ে দেই সাফিউল সর্দারকে। সাফিউল সর্দার এখন কোথায় আছে জানি না। কিন্তু আমি সেই টাকার মধ্যে ৫হাজার টাকা ইতোমধ্যে সিরাজুলকে দিয়েছি। আর বাকি ৫হাজার টাকা ২৫মার্চ পরিশোধ করবো বলে সময় নেই। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার সিরাজুল আমাকে সেই টাকার জন্য আটক করে মারধর করে। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা এসে সিরাজুলকে প্রশ্ন করেন টাকার জন্য কাউকে আটক করা কি ঠিক? আপনি যদি টাকা পান, আর সে যদি না দেয়, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এই কথা বলা মাত্র সিরাজুল ও তার লোকজন আমার উপর আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মারধর করে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। এ সময় সাংবাদিকরা ভিডিও করলে সিরাজুল ও তার লোকজন সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের উপরেও হামলা চালায়। পরবর্তীতে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনা স্থল থেকে আমাকে উদ্ধার করে।
তিনি আরও বলেন, তারা টাকার জন্য আমাকে প্রচুর মারধর করেছে। পুলিশ আমাকে উদ্ধার না করলে তারা হয়তো আমাকে মেরে ফেলতো। আমি থানায় অভিযোগ করেছি। এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক মাহমুদ হাসান বলেন, আমাদের কাজই হলো ছবি ও ভিডিও করা। জাকিরকে মারধর করার ভিডিও করলে সিরাজুল ও তার লোকজন আমাদের উপর অতর্কিত ভাবে হামলা করে। বিষয়টি পুলিশকে অবগত করা হলে। পুলিশ এসে জাকিরকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা তাদেরকে কোন মারধর করি নাই। তারাই আমাদেরকে মারধর করেছে। আপনি ও আপনার লোকজন সাংবাদিক ও জাকিরের উপর হামলা করেছেন তার ভিডিও আমাদের নিকট আছে এমন প্রশ্ন করা হলে তার কোন সদুত্তর দিতে পারে নি তিনি।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা প্রেসক্লাবের সভাপতি ইলিয়াস বসুনিয়া পবন বলেন, সাংবাদিকের উপর হামলা কোন ভাবে মেনে নেওয়া যায় না। সাংবাদিকের কাজ ছবি তোলা ও ভিডিও করা। এ বিষয়ে প্রেসক্লাবে আলোচনা করে সাংগঠনিক ভাবে কর্মসূচী ঘোষনা দেয়া হবে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ওসি শাহা আলম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।