বাংলাদেশ পুলিশের ধারাবাহিক উত্থান, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধে অবদান সহ আধুনিক পুলিশের কার্যক্রমের নিয়ে লালমনিরহাটে চালু হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র পুলিশ জাদুঘর। হাতীবান্ধা থানার বৃটিশ আমলের পুরোনো নান্দিক ভবন সংস্কার করে জনবান্ধব পুলিশিং এর বাস্তব রুপ ফুটে তোলা হয়েছে জাদুঘরটিতে। আজ ২২ জুন পুলিশের আইজিপি ড. বেনজির আহমেদ আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন ঘোষণার পর জনসাধারণের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
১৯১৬ সালে বৃটিশ আমলের ঐতিহ্যবাহী ভবনটিতে হাতীবান্ধা থানার কার্যক্রম চলতো। নতুন ভবন হওয়ার পর এটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকলে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানার পরিকল্পনায় ভবনটি সংরক্ষণের নিমিত্তে জাদুঘর নির্মাণ করা হয়। জাদুঘরে নান্দনিক শিল্পকলার যোগসাজসে সাতটি গ্যালারিতে পুলিশি ব্যাবস্থার সুলতান ও মোগল আমল, ব্রিটিশ আমল তথা আধুনিক পুলিশের যাত্রা, পাকিস্তান আমল ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশের ভুমিকা বিস্তারিত বর্ণনাসহ স্বচিত্র রয়েছে। তথ্য চিত্র প্রদর্শনী গ্যালারি, মুক্তাঞ্চলে মুক্তি পুলিশ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ পুলিশ গ্যালারিতে ছবিসহ আলাদা আলাদা কক্ষে সুনিপুণ হাতে এসব সাজানো হয়েছে। আদি পুলিশের উৎপত্তির সরঞ্জাম সহ প্রতিটি গ্যালারিতে রাখা নিদর্শনগুলো দর্শক ও গবেষকদের সামনে তুলে ধরতে কাচঘেরা করে রাখা হয়েছে। পুলিশের প্রাচীন আমলের নিদর্শন থেকে শুরু করে জনবান্ধন পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাধারণ মানুষকে অবগত করা হয়েছে আধুনিক পুলিশের সকল কার্যক্রম।
পুলিশ জাদুঘরের কিউরেটর আহসান হাবিব খান বলেন, পুলিশ সুপার স্যারের পরিকল্পনায় জাদুঘরটি নির্মাণের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্মারক সংগ্রহ করা হয়। পুলিশের ইতিহাস ও উৎপত্তির তথ্য ও দুর্লভ কিছু সংগ্রহ এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলায় পুলিশের একমাত্র জাদুঘরটি স্থাপনে উচ্ছসিত স্থানীয়রা।
হাতীবান্ধা সরকারী আলিমুদ্দিন কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্রী মিম বলেন, হাতীবান্ধায় পুলিশ জাদুঘর হয়ে আমরা অভিভূত। এর মাধ্যমে পুলিশের সার্বিক কার্যক্রম আমরা জানতে পারছি। পড়াশুনার পাশাপাশি পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে আসা হবে।
ক্যাপ্টেন (অবঃ) আজিজুল হক বীর প্রতীক বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম মুক্তাঞ্চল যুদ্ধের পটভূমি পরিবর্তন করে দিয়েছিলো। এই অঞ্চলের পুলিশ বাহিনী সেই মুক্তাঞ্চল রক্ষা করে যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলো। স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর অবদান ও পুলিশের ইতিহাস সংরক্ষণ করে রাখতে পুলিশ যাদুঘর সত্যি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা-(বিপিএম-পিপিএম) বলেন, নতুন থানা ভবন হওয়ার পর স্থাপনাটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিলো। ঐতিহাসিক স্থাপনাটি বৃটিশ আমলে তৈরি করা হয়েছিলো। ভবনটি দেখে ভাল লাগায় এটি রক্ষণের পরিকল্পনা করি। সেই চিন্তা থেকে জাদুঘরে পুলিশের ধারাবাহিক উত্থান,পুলিশের ইতিহাস বৃটিশ আমল , পাকিস্তানি আমল এবং বাংলাদেশ আমলসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভুমিকা সচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও জনবান্ধন পুলিশিং এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ পুলিশের সার্বিক কার্যক্রম বিষয়ে যাতে জানতে পারে সেটিও তুলে ধরা হয়েছে। গ্যালারির মাধ্যমে পুলিশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিক বিবরণ এখানে পাওয়া যাবে।