উজানের ঢল ও টানা কয়েক দিনে বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর গতকাল রবিবার রাত থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। সোমবার তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি কমতে শুরু করায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। এ কারনে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে বানভাসী মানুষ। এদিকে জেলার পানি উঠায় ১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠ দান বন্ধ রয়েছে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমা ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। দুপুর ৩টায় পানি আরো কমে ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া বিভাগের উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন।
জানা গেছে, গতকাল রবিবার রাত থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করার কারনে মানুষ ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করছে। কিন্তু লালমনিরহাট সদর উপজেলা ও আদিতমারী উপজেলার বানভাসী মানুষদের যেন দীর্ভোগ পিছু ছাড়ছেই না। পানি নামতে না নামতেই দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। বন্যায় রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
পানি বাড়ার কারণে লালমনিরহাট সদর উপজেলার ১১টি এবং আদিতমারী উপজেলার ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বাহাদুর পাড়া, গরীবুল্লাহপাড়া, চৌরাহা, গোবরর্দ্ধন এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, তাজপুর, হরিনচড়া ও গোকুন্ডা এলাকায় নদী ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে। গত ২৪ ঘন্টায় তিস্তা নদীর ভাঙনে অন্তত ৫০টি বাড়ি ও শত শত বিঘা আবাদি জমি,গাছপালা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে ভুক্তভোগী মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে। আরো শতাধিক বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙনের মুখে রয়েছে বলে জানান তিনি।
বাহাদুর পাড়া এলাকার ভাঙনের শিকার আজিমুল হক (৫৫) বলেন, তিন দিন ধরে ঘরের ভিতর পানি নিয়া কোন রকমে দিন পার করছি। পানি কমার সাথে-সাথে রবিবার রাত থেকে শুরু হয়েছে নদীর ভাঙন। কোন রকমে ঘর দুইটা সরাতে পেরেছি।অন্যকিছু সরাতে পারিনি।
হরিনচড়া এলাকার ওলিয়ার রহমান বলেন, তিস্তার ভাঙনে এই পর্যন্ত ৪বার বাড়ি সরে নিয়েছি। আবারো রাত থেকে শুরু হয়েছে ভা্ঙগন।এবার বাড়ি ভেঙ্গে কোথায় রাখবো তা অাল্লাহ জানে।
হরিনচড়া গ্রামের মাইদুল ইসলাম বলেন, হরিনচড়া এলাকার দুঃখের শেষ নাই। আর একটু হলেই বাজারের মসজিদ, বাজার, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করেই কিছুই বাদ যাবে না ভাঙন থেকে। আবাদি জমি তো ভাঙতে-ভাঙতে প্রায় শেষ।
ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ৫টি বাড়ি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়াও পানি কমার সাথে-সাথে চরের জমিও নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলে যোগ করেন তিনি। ইউনিয়নের জন্য সরকারিভাবে পাঁচ টন চাউল বরাদ্দ পেয়েছি,তা বিতরণ কার্যক্রম চলছে বলে জানান তিনি।
মহিষখোচা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল মজিত হোচত বলেন, এখনও অনেক বাড়ি-ঘরে পানি রয়েই গেছে। সম্পূর্ন পানি নামতে আরো কিছুটা সময় লাগবে। ভাঙন প্রসঙ্গে তিনি বলেন মহিষখোচা ইউনিয়নে গত ২৪ঘন্টায় অনন্ত ১৫টার মতো বাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েছে।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-ই-আল সিদ্দীকি বলেন, পানিবন্দি মানুষের জন্য নগদ টাকা ও জিআর চাল বিতরন করা হচ্ছে। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো তালিকা করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট সহায়তা চাওয়া হবে জানান তিনি।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার ভাঙন কবলিত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, জরুরী ভিত্তিতে যেসকল এলাকার ভাঙন রোধ করা সম্ভব সেভানে বালির বস্তা ও জিও ব্যাগ ফেলে তা রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেখানে সেটি সম্ভব নয় সেটি রক্ষার জন্য উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে জানিয়ে নির্দেশনা চাওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক রকিব হায়দার বলেন, বলেন, বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ১৩ লক্ষ টাকা ও ৯০ টন জিআর চাল বন্যার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ শুরু হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।