ফের সড়ক অবরোধের হুঁশিয়ারি রিকশা চালকদের

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নেমেছেন বিক্ষুব্ধ রিকশা চালকরা। তবে আজকের মতো আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিলেও সড়ক অবরোধ চলমান রাখার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনরত রিকশা চালকরা।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকাল ৯টায় রিকশা চালকরা রাজধানীর সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে ফের অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের প্রতিবাদে এবং নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে আজ সোমবার রাজধানীর মুগদা, মানিকনগর, মান্ডাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তায় অবস্থান নেয় বিক্ষুব্ধ রিকশা চালকরা। সোমবার (০৮ জুলাই) সকাল ৭টা থেকে তারা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন।
এসময় রিকশার চলাচলের ওপর সিটি কর্পোরেশনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন রিকশা মালিকরাও।
সড়কে রিকশাচালকদের অবরোধের বিষয়ে মুগদা থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, মুগদা বিশ্বরোড থেকে মানিকনগর বিশ্বরোড পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিয়েছেন রিকশাচালক ও মালিকরা। তাদেরকে সড়ক থেকে সরে যেতে বললেও তারা সরে যায়নি। তবে তাদেরকে সরাতে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে যানজট দূর করতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন রুটে গত রবিবার থেকে রিকশা, অন্যান্য অবৈধ ও অ-অনুমোদিত যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বুধবার (৩ জুলাই) দুপুরে ডিএসসিসির নগর ভবনে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল অথরিটির (ডিটিসিএ) এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রবিবার (৭ জুলাই) সকালে গাবতলী থেকে মিরপুর রোড হয়ে আসাদগেট, আজিমপুর ও সায়েন্সল্যাব থেকে শাহবাগ পর্যন্ত এবং কুড়িল থেকে বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁও হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত প্রধান সড়কে এ ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হয় নি।
ডিটিসিএ-এর সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সড়কের মূল অংশে সব ধরনের রিকশা, ভ্যান, লেগুনা ও হিউম্যান হলারসহ বিভিন্ন অবৈধ এবং অ-অনুমোদিত যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে এসব সড়কের সঙ্গে সংযোগকারী সড়কগুলোতেই শুধু চলাচল করতে পারবে সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন পাওয়া রিকশা।
দুই সিটি কর্পোরেশন- ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ (ডিএসসিসি) সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং আরও কয়েকটি সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, গাবতলী থেকে আজিমপুর অর্থাৎ মিরপুর রোড ও সায়েন্সল্যাব থেকে শাহবাগ পর্যন্ত এবং প্রগতি সরণির কুড়িল থেকে বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁও হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত সড়কে যেন কোনোভাবেই রিকশা, ভ্যানসহ অবৈধ এবং অনুমোদনবিহীন অন্য যানবাহন চলাচল করতে না পারে, তার জন্য থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ ছাড়া রিকশা, ভ্যানসহ অবৈধ এবং অনুমোদনবিহীন অন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ নিশ্চিত করার জন্য মূল দায়িত্বে থাকছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। সিদ্ধান্ত কার্যকরের আগে এসব সড়কের আশপাশে মাইকিং এবং সংবাদ মাধ্যমে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সতর্কতা জারি করা হয়।
ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, রাজধানীর সড়কে যানবাহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে ডিটিসিএ’র একটি কমিটি গঠিত হয় যার প্রথম বৈঠক ছিলো বুধবার। এ বৈঠকে আমরা রাজধানী ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়ক থেকে রিকশা, লেগুনা ও হিউম্যান হলারসহ বিভিন্ন অবৈধ এবং অ-অনুমোদিত যানবাহন চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেই। তারই অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে রাজধানীর দুইটি রুটে- কুড়িল থেকে খিলগাঁও রামপুরা হয়ে সায়দাবাদ এবং গাবতলী থেকে আসাদগেট মিরপুর রোড হয়ে আজিমপুর ও সাইন্সল্যাব থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কে রিকশার পাশাপাশি অন্য সব অবৈধ যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেই। আগামী রবিবার (৭ জুলাই) থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
একই সঙ্গে এসব সড়কের দুই পাশে ফুটপাত দখল করে তৈরি করা স্থাপনা এবং অবৈধভাবে নির্মিত ভবন এবং অন্যান্য স্থাপনা উচ্ছেদে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি কাজ করবে বলেও জানান সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, এসব সড়কের দুই পাশে ফুটপাত দখল করে যেসব স্থাপনা রয়েছে সেগুলো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিজ নিজ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানোর মাধ্যমে অপসারণ করবে। আর যেসব ভবন অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে বিল্ডিং কোড না মেনে নির্মাণ করা হয়েছে যেগুলো ফুটপাতে পথচারীদের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে সেগুলো রাজা রামমোহন আদালত পরিচালনা করার মাধ্যমে ভেঙে দেবে। সার্বিক পরিস্থিতি পরবর্তী এক সপ্তাহ আমরা পর্যবেক্ষণ করে আর একটি বৈঠকের মাধ্যমে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
এ সময় রিকশা, লেগুনা ও হিউম্যান হলার বন্ধের কারণে জনগণের দুর্ভোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সাঈদ খোকন বলেন, রিকশা এবং এসব যানবাহন বন্ধের কারণে আমাদের নগরবাসীদের যেনো কোনো দুর্ভোগ পোহাতে না হয় তার জন্য সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বিআরটিসি এবং পরিবহন মালিক সমিতি। যাত্রীদের চলাচলে রাস্তায় পর্যাপ্ত পরিমাণ যানবাহনের ব্যবস্থা তাদের পক্ষ থেকে রাখা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের মনোপলি বা ডিক্টেটরশিপের সুযোগ নেই। পুরো প্রক্রিয়াটি সার্বক্ষণিক আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে।