কোটা আন্দোলনকারীদের সরকার পতনের ‘এক দফা’ কর্মসূচি চলাকালে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সিরাজগঞ্জে দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার রায়গঞ্জ প্রতিনিধি প্রদীপ কুমার ভৌমিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
রোববার অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন হামলার শিকার হয়েছেন আরও অনেক সাংবাদিক। এ সময় গণমাধ্যমের ভবন, গাড়ি ও ক্যামেরা ভাঙচুরেরও অভিযোগ উঠে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচে।
সকালে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের মত বিনিময় সভায় মিছিল নিয়ে হামলা করে আন্দোলনকারীরা। তারা কার্যালয়ে ভেতরে থাকা ৪০ থেকে ৫০ জনকে পিটিয়ে ও কোপায়।
এতে সেখানে ছয় জন মারা যায় বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান। এই ছয় জনের একজন ছিলেন দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার রায়গঞ্জ প্রতিনিধি প্রদীপ কুমার ভৌমিক।
বিকাল পৌনে চারটার দিকে শাহবাগে আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়েন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের সিনিয়র রিপোর্টার শামীমা সুলতানা। তাকে তাকে বাঁচাতে গেলে আহত হন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাসুম বিল্লাহ ও ফটোগ্রাফার মাহমুদ জামান অভি। বণিক বার্তার সিনিয়র ফটোগ্রাফার কাজী সালাউদ্দিন রাজু আহত হয়েছেন।
মাহমুদ জামান অভি বলেন, “আমি দেখলাম শামীমা আপুকে হেনস্তা করা হচ্ছিল। পরে আমরা এগিয়ে যেতে যেতেই তার উপরে হামলা শুরু করে দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় আমরাও হামরার শিকার হই।”
রাজধানীর ধানমন্ডিতে ২৭ নম্বর সড়কে রাপা প্লাজার সামনে হামলার শিকার হন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার দুজন সাংবাদিক। তাঁরা হলেন জাহিদুল ইসলাম ও মিরাজ হোসেন। জাহিদুল ইসলামের মাথা ফেটে গেলে হাসপাতালে নিয়ে মাথায় পাঁচটি সেলাই দিতে হয়।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আওয়ামী লীগ- ছাত্রলীগের লোকেরা আমার এক সহকর্মীকে মারতেছিল, তখন আমি দৌড়ে গিয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি। পরে আমাকেও তিন ধাপে মারধর করে। আমার মাথায় ক্যাপ না থাকরে বড় ধরনের কিছু ঘটে যেত।”
জিগাতলায় হামলার শিকার হন দৈনিক যায়যায়দিনের দুই সাংবাদিক নাহিদ হাসান ও আমিরুল ইসলাম। তাদের মারধর এবং মোবাইলসহ মাইক্রোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। উপস্থিত সাংবাদিকরা তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
দেশ রূপান্তরের প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ঢাকা আরিচা মহাসড়কের মানরা এলাকায় এটিএন বাংলার মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম সুজনের উপর হামলা করে আন্দোলনকারীরা।
তাকে উদ্ধার করতে গেলে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি আর এস মঞ্জুর রহমানকেও পিটিয়ে জখম করা হয়। পরে স্থানীয় পত্রিকার রিপোর্টার দেওয়ান সাতমান শাওনকে আহত করে।
একাত্তর টেলিভিশনের অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, রামপুরা সংলগ্ন হাতিরঝিল এলাকায় দুপুরে একাত্তর টেলিভিশনের গাড়ি ভাঙচুর করে সিনিয়র রিপোর্টার হাবিব রহমানকে গুরুতরভাবে আহত করে।
প্রেস ক্লাব এলাকায় দৈনিক আমাদের সময়ের চিফ ফটো জার্নালিস্ট মেহেরাজ এবং আজকের দৈনিকের নুর হোসেন পিপুল আহত হয়েছেন।
চাঁদপুরে একাত্তর টেলিভিশনের কার্যালয়ে ভাঙচুর কারার পাশাপাশি হামলায় গুরুতর আহত হন জেলা প্রতিনিধি আল-আমিন ভূঁইয়া, পটুয়াখালীতে ইটের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন পটুয়াখালী প্রতিনিধি আহসানুল কবির রিপন।
সিলেটে একাত্তর টেলিভিশনের প্রতিনিধি হোসাইন আহমদ সুজন ও তার ক্যামেরা পারসনকে মারধর করে তাদের সঙ্গে থাকা ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়।
মুন্সীগঞ্জে আন্দোলনকারীরা সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হলে তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছালে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এ সময় একাত্তর টেলিভিশনের জসীমউদ্দিন দেওয়ানসহ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন।
লালমনিরহাটে আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।এসময় ভিডিও ধারন করতে গিয়ে পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে যমুনা টেলিভিশনের ভিডিও জার্নালিস্ট মাহবুব আহত হন।
এছাড়াও রাজধানী ও রাজধানীর বাহিরে অনেক সাংবাদিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।