শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও কারফিউর কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী সদর দফতর। ১০৭টি যাত্রীবাহী ট্রেন ৮টি মালবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
গত আট দিনে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এখনো ট্রেন চলাচলের কোনো নির্দেশনা আসেনি।
রোববার (২৮ জুলাই) সকালে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ আমাদের পত্রিকাকে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার কারণে বেশ দুর্ভোগে পড়েছেন ঈশ্বরদীসহ উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার ভ্রমণপ্রিয় সাধারণ ট্রেন যাত্রীরা। কম খরচে, দ্রুত সময়ে এবং কম ভোগান্তিতে বিভিন্ন গন্তব্যে মানুষ ট্রেনকে বেশি নিরাপদ মনে করেন। তাই ট্রেন চলাচল না করার কারণে সড়ক পথে ভেঙে ভেঙে দ্বিগুণ খরচে দৈনন্দিন কাজকর্মের জন্য ছুটতে হচ্ছে ছোট ছোট যানবাহনে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আনোয়ার হোসেন জানান, দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে সর্বাধিক এলাকা জুড়ে পাকশী রেলওয়ে বিভাগ গঠিত। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী সদর দফতরের আওতাধীন। গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগে প্রতিদিন ১০৭টি আন্তঃদেশীয়, কলকাতার এবং রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে থাকে। এর মধ্যে দেশে চলাচল করে ৫৬টি আন্তঃনগর ট্রেন ৩১টি মেইল, ১২টি লোকালসহ মোট ৯৯টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। এছাড়াও ৬ জোড়া মালবাহী ট্রেন প্রতিদিন চলাচল করে।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের বাণিজ্যিক দফতরের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন যাত্রীবাহী ট্রেন থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগ গড়ে দেড় কোটি টাকা আয় করে থাকে। এ ছাড়াও মাল ও তেলবাহী ট্রেন থেকে আয় হয় রেলওয়ের। নাশকতার আশঙ্কায় গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাত থেকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সব ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। শনিবার (২১ জুলাই) সকাল থেকে পর্যায়ক্রমে ১০৭টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে প্রতিদিন শুধুমাত্র পাকশী রেল বিভাগ যাত্রী খাতে প্রতিদিন দেড় কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একই সঙ্গে মাল ও তেলবাহী ট্রেনও কয়েকদিন বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছে পাকশী রেল বিভাগ। এরই মধ্যে একদমই সীমিত পরিসরে মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) থেকে কড়া নিরাপত্তায় মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল জানান, যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো বিভিন্ন গন্তব্যস্থলে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে রাখা রয়েছে। রেল মন্ত্রণালয় থেকে এখনো নির্দেশনা আসেনি। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও কারফিউর কারণে পাকশী প্রকৌশল বিভাগেই ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। পাকশী রেলওয়ে বিভাগ আমাদের যাত্রীবাহী সব ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি রয়েছে, এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ট্রেন চলাচল শুরু করা হবে।
এদিকে যাত্রী খাতে রেলের আয় কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, সব পরিবহনের তুলনায় রেলওয়েতে সেবার মান বেড়ে যাওয়ায় ট্রেনে যাত্রী পরিবহনের সংখ্যাও ক্রমশই বাড়ছে। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে পাকশী রেলওয়ে বিভাগ শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাত থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে প্রতিদিন গড়ে যাত্রীবাহী ট্রেন ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল না করার কারণে আয় কমেছে সোয়া কোটি টাকা।
ডিআরএম শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ আরও বলেন ‘আমরা আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি হয়তো দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আরও দুই-একদিনের মধ্যে আশা করছি, হয়তো বা পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সব যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে।