তিস্তার উজানে ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা অংশে বাধ ভেঙ্গে যাওয়ায় ভারী পানির ঢলে এবং টানা বৃষ্টিতে তিস্তায় দেখা দিয়েছে বন্যা। এতে তিস্তার দুই পাড়ের নিম্নাঞ্চল সহ চরাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার সংকট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর বিপৎসীমার নিচে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হলেও কাউনিয়া পয়েন্টে ২৫ সে.মি উপরে রেকর্ড করা হয়। সকাল নয়টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৮ সে.মি নিচে ও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সে.মি. উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।
ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হলেও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। বিস্তৃন চরাঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে বিপাকে পড়েছেন বানভাসী মানুষ।
গরু -ছাগল নিয়ে ঠাই নিয়েছেন বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে। উৎকন্ঠায় রাত পার করলেও পানি নেমে যেতে শুরু করায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে বন্যা পরবর্তী ভাঙ্গণের আশংকা রয়েছে। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতা প্রচারনা, সার্বিক দেখভাল করা হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য জানায়, ভারতীয় সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের উত্তর সিকিম এ তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে সিকিম অঞ্চলে আগামী ৪৮ ঘন্টা ভারী বৃষ্টি পাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এছাড়াও রংপুর অঞ্চলসহ লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম এলাকায় রাত থেকেই বৃষ্টি চলছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের আমতলা এলাকার কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, চরে তিন দোন জমিতে রোপা আপন বপন করেছিলাম। ধান কাটার সময়ও চলে আসছে। হঠাৎ পানি আসায় সব ডুবে আছে। কতটুকু ধান থাকবে বলা মুশকিল।
একই ইউনিয়নের গোবর্দ্ধন গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন বলেন, চরে কয়েকদিন আগে ধান কেটে রেখেছি। হালকা বৃষ্টি হয় জন্য নিয়ে আসি নাই বাড়িতে। পানি আসার খবরে কোন রকমে ভেজা ধান নিয়ে আসছি। বৃষ্টি পড়তেছে। তাই ধান মাড়াই করতেও পারছিনা।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুণিযাগাছ ইউনিয়নের পাকারমাথা এলাকার জোবাইদুল বলেণ,পুকুরে ৫০হাজার টাকার মাছের পোনা ছেরেছিলাম।হঠাৎ বন্যা আসায় সব মাছ ভেসে গেছ
আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, বন্যার পানিতে চরের সবজি ক্ষেত, আলু, রোপা আপন সহ বিভিন্ন ফসল ডুবে আছে। মাঠ পর্যায়ে আমাদের লোকজন কাজ করছে। এখনো ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা সম্ভব হয়নি।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জি আর সারোয়ার বলেন, আমরা নদী এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাইকিং করে ও বিভিন্নভাবে নদী এলাকার মানুষকে সচেতন করেছি। আমি গতকাল রাতে নদী এলাকা পরিদর্শন করে সার্বিক খোজখবর নিচ্ছি। চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের লোকজনদের পশুপাখিসহ প্রস্তুতি নিয়ে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। যেকোন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, উজানের ভারী ঢলে তিস্তায় আবারও বন্যা দেখা দিতে পারে। আমরা সার্বিক খোজখবর রাখছি।